লড়াই আন্দোলন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ… ব্যক্তি মানুষের অধিকার, রাষ্ট্র আর শাসকদের মধ্যে এক স্ববিরোধিতার সম্পর্ক বহু আগে থেকেই। রাষ্ট্র, শাসক সত্য মেনে নেয় না, তারা প্রশ্নকে ভয় করে, তারা ডোন্ট কেয়ার আটিচ্যুডকে বিদ্রোহ মনে করে, এটা রাষ্ট্র আর শাসকের চরিত্র। আর ঠিক তাই রাষ্ট্রের মধ্যেই থাকে এক বিচার ব্যবস্থা, যে নাকি নির্মোহ, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে, অন্তত সেটাই তার করার কথা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাকেও রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যেই শামিল করে নেওয়া হয়, সে তার নিরপেক্ষতা হারায়, রাজার পরনে কাপড় যে নেই, সে বিচার ব্যবস্থা তখন তা দেখেও দেখে না, কেন? রাজতন্ত্র চলে গেছে কবেই, দুনিয়ায় ঘোষিত স্বৈরাচারী শাসকের সংখ্যা নগণ্য, কিন্তু বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে কেন?
আমাদের দেশের কথাই ধরা যাক না কেন, ৪৭-এ স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত, ১ কোটি টাকা ব্যাঙ্কে আছে, এমন একজনেরও ফাঁসি হয়েছে, দেখাতে পারবেন? যে দেশের সংসদে সদস্যদের ৩৫ শতাংশের বেশি সাংসদের উপর হত্যা, হত্যার চেষ্টা, মহিলাদের উপর অত্যাচারের মামলা চলে, অথচ তাঁরাই আমাদের নীতি নির্ধারক, সেই দেশে বিচার নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো। দেশে এক সুযোগ সুবিধে পাওয়া, প্রিভিলেজড শ্রেণি তৈরি হচ্ছে, তারা সব কিছুতেই প্রিভিলেজড, তাদের পয়সা আছে, ব্যবসা আছে, বাড়ি আছে, গাড়ি আছে, প্রভাব প্রতিপত্তি আছে, তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মিডিয়া আছে, পুলিশ আছে, প্রশাসন আছে, এমনকী বিচার ব্যবস্থাও তাদের জন্য আলাদা। সেই বিচার ব্যবস্থাকে আরও ইনএফেকটিভ, আরও পঙ্গু করে, খোঁড়া করে তোলার জন্য নানান কালা কানুন এসেছে, বিভিন্ন সময়ে আনা হয়েছে। এসমা এসেছে, নাসা এসেছে, ইউএপিএ এসেছে এবং শেষতম সংযোজন এই প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট।
আরও পড়ুন: কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কর রে লোপাট (পর্ব-১৫)
এসেছিল আগেই কিন্তু এই মোদি-শাহ জমানাতে সেই আইনের আমূল পরিবর্তন করে আপাতত এ এক দানবীয় আইন, এই আইনের সাহায্যেই ইডির এই বাড়বাড়ন্ত। দুটো জিনিস এই আইনে আছে যা সভ্য সমাজের কোনও আইনেই নেই। ন্যায়শাস্ত্র বলে, জামিন পাওয়াটা অভিযুক্তের অধিকার, একান্ত না দেওয়া গেলেই তাকে আটক রাখা হোক। আর এই মানিলন্ডারিং আইনে জামিন না পাওয়াটাই আইন, জামিন দেব না। আর দু’ নম্বর অস্ত্র আরও সাংঘাতিক, অভিযুক্তকে প্রমাণ করতে হবে যে সে দোষী নয়। অর্থাৎ অন্য সব আইন মতে যিনি অভিযোগ আনছেন, সরকারই হোক বা ব্যক্তি হোক, অভিযোগকর্তাকেই অপরাধের প্রমাণ এনে হাজির করতে হবে। পুলিশকে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে আসামি সত্যিই খুন করেছিল। কিন্তু এই টাকা তছরুপের নতুন আইন বলছে আপনি যে দোষী নন, তা প্রমাণ করার দায় আপনার। এরকম দানবীয় আইন আসলে অপব্যবহার হবে, হচ্ছেও। এই ধারাতেই নিউজক্লিকের প্রবীর পুরকায়স্থ বা আমাদের সম্পাদক কৌস্তুভ রায় জেলে বন্দি। আসলে এই আইন বিরোধিতাকে স্তব্ধ করার জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে।
দেখুন ভিডিও: